কর্মক্ষেত্রে একজন সফল লিডার বা নেতা বলতে আসলে কি বুঝায়?
না, এটি আপনার টিমের লোকদের মাঝে কাজ ভাগ করে দেওয়ার ক্ষমতা বা কাজটি আপনি কিভাবে সম্পাদন করেন সেটা বুঝায় না।
আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, নিজের দলের নেতা হতে পারলে কেমন লাগবে? নেতৃত্বের সংজ্ঞার দিকে তাকালে বুঝবেন, মাঝেমাঝে কি কি বাদ দিতে হবে সেটা জানলেই যেকোনো স্কিল তাড়াতাড়ি রপ্ত করা যায়। যেমন, একজন লিডার হওয়া:
- আপনার পজিশন বা আপনার জ্যেষ্ঠতার সাথে সম্পর্কিত নয়
- আপনার ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত নয়
- ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত নয়
“লিডারশীপ বা নেতৃত্ব হল কল্পনাকে বাস্তবকে রূপান্তর করার ক্ষমতা” – ওয়ারেন বেনিস
আজকের শিক্ষার্থীরা আগামীকাল কোনও টিম বা কোম্পানির নেতা হবে। তবে কয়েকটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আপনাকে সফলভাবে নেতৃত্ব দিতে সহায়তা করবে। একজন ভাল নেতা হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ৫০ টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ গুণ থাকা দরকার, তবে নিম্নলিখিত ৭ টি অধিক প্রয়োজনীয়।
তবে, মজার ব্যাপার কি জানেন? নেতৃত্বের প্রতিটি গুণই অনুশীলন এবং পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শেখা যায়।
১. সফল নেতারা ভবিষ্যৎ অনুমান করতে পারেন
তিনি কোন দিকে যাচ্ছেন এবং কী অর্জন করতে চান সে সম্পর্কে একজন লিডারের স্পষ্ট ধারণা থাকে। এই স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিই একজন লিডারকে ম্যানেজার থেকে পৃথক করে। একজন ম্যানেজার শুধু কাজ করিয়ে নেন, অন্যদিকে একজন লিডার নিজের সতীর্থদের আবেগের সাথে কাজটা জুড়ে দেন।
এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া হলো: স্টিভ জবস যেকোনো ধারণাকে ভেঙে সেটা আরও জোরালো বানানোর সক্ষমতার কারণে সহকর্মীদের মাঝে বিখ্যাত ছিল। তিনি তার চারপাশের সবাইকে বিশ্বকে নতুনভাবে দেখায় অনুপ্রাণিত করেছেন, তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন এবং বিকল্প একটি মহাবিশ্বের কথা উপস্থাপন করেছেন। তিনি মানুষকে নিজের উদ্দেশ্য বিশ্বাস করতে বাধ্য করতে পেরেছিলেন।
২. সফল নেতারা নির্ভীক এবং সাহসী হন
সাহসী নেতা হওয়ার অর্থ জীবন বা ব্যবসায়িক সাফল্যের কোনও সুনির্দিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক। আপনার করা প্রতিটি প্রতিশ্রুতি এবং আপনার নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপের অর্থ আপনি কোনও না কোনও ঝুঁকি কাঁধে নিয়েছেন। নেতৃত্বের এই সাতটি গুণাবলীর মধ্যে সাহস হল একজন সফল নেতার মধ্যে সবচেয়ে বাহ্যিকভাবে চিহ্নিত করার মত গুণ।
৩. সফল নেতারা সর্বদা ন্যায়পরায়ণতার মূল্যায়ন করেন
কর্পোরেট এক্সিকিউটিভদের মধ্যে যাকেই ন্যায়পরায়ণতার গুরুত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, প্রায় সবাই এ কথার সাথে সম্মত হয়েছেন যে ন্যায়পরায়ণতা যে কোনও প্রতিষ্ঠান এবং এতে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে যে কোনও প্রতিষ্ঠানের নেতা হিসাবে আপনি যা কিছু করছেন সব কিছুতেই সম্পূর্ণ সততা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ন্যায়পরায়ণতার মূল বিষয় হল সত্যবাদিতা, এটি আপনাকে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বদা সত্যটা তুলে ধরায় উৎসাহিত করে। ন্যায়পরায়ণতা হল আস্থার মৌলিক গুণ যা আপনার টিমের সফলতার জন্য প্রয়োজনীয়।
৪. সফল নেতারা নম্র ও বিনয়ী হন
এখন ভাল লিডার কেবল শক্তিশালী মনোবল সম্পন্ন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীই নন, নম্রও হয়ে থাকেন। নম্রতার অর্থ হল অন্যদের মেধা দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে তাদের মূল্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার আত্মবিশ্বাস এবং আত্ম-সচেতনতা থাকা। অর্থাৎ আপনি স্বীকার করতে ইচ্ছুক যে আপনি ভুল হতে পারেন, এবং আপনার কাছে সব সময় উত্তর নাও থাকতে পারে। এর অর্থ এটাও দাঁড়ায় যে যেখানে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন সেখানে আপনি যথার্থ স্বীকৃতি দেন।
৫. সফল নেতারা কৌশলগত পরিকল্পনায় ভাল
সফল নেতাদের নিকটভবিষ্যৎ দেখার এবং প্রতিষ্ঠানটি কোথায় যাচ্ছে সে সম্পর্কে নির্ভুলতার সাথে কিছুটা অনুমান করার ক্ষমতা থাকে। ভাল নেতা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার প্রতিযোগীদের আগেই ট্রেন্ডে কি আসতে পারে সেটার পূর্বাভাস বুঝতে হবে। কী ঘটছে, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য কি এবং তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছর পর এটি কোথায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে – এসবের ভিত্তিতে আপনাকে ক্রমাগত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে। যে নেতারা তাদের ক্লায়েন্টদের সাথে সাথে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যের দিকে লক্ষ্য রাখেন, তারা বিবেচনামূলক এবং কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের দলের প্রয়োজন বুঝতে পারেন।
৬. সফল নেতারা কখনও শেখা বন্ধ করেন না
সফল হতে চাওয়া যে কোনও ব্যক্তির জন্য “কখনই শেখা থামাবে না” – একটি উন্মুক্ত রহস্য। এখানে “শেখা” শব্দটি আক্ষরিক এবং রূপক – দুইভাবে নেওয়া যেতে পারে।
এখানে একটি উদাহরণ দেখা যাক: একজন যুবক একটি কোম্পানিতে জয়েন করল, তিনি বেশ মেধাবী এবং কোনও একদিন ভাল একজন লিডার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে যোগ্যতার অভাব রয়েছে। এই যুবক এই যাত্রার মধ্যে নতুন নতুন অনেক জিনিস উপলব্ধি করতে পারে এবং ধীরে ধীরে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারে, তবে তার কিছু সতীর্থ হয়তো তাকে সম্মান করবে না। এজন্য সফল নেতা হতে উভয় দিক থেকে শিখতে হবে। সময়ের সাথে অভিজ্ঞতা থেকে এবং সতীর্থদের কাছে থেকে সম্মান পাওয়ার প্রচেষ্টার মাধ্যমে।
৭. সফল নেতারা কখনও নিজের লক্ষ্য থেকে অন্যমনস্ক হন না
একজন দক্ষ নেতা সবসময় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন এবং পরিস্থিতির দিকে মনোনিবেশ করেন। তারা নিজের দ্বারা, অন্যের দ্বারা এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কি কি অর্জন করা উচিত তার ফলাফলের দিকে তারা মনোযোগ দেন। তারা তাদের নিজের, সতীর্থদের এবং প্রতিষ্ঠানের শক্তির মনোযোগ স্থির রাখেন।
পরিশেষে বলা যায়:
একজন অসফল লিডারের বৈশিষ্ট্য
- অহংকারী মনোভাব
- স্বার্থান্বেষী
- যখন তাদের কিছু করিয়ে নেওয়া দরকার হয়, তখন তারা আদেশ দেয়
- তারা স্বৈরাচারী এবং তাদের আশেপাশের লোকদের উপর (মানসিক) অত্যাচার করে
- তারা কারো কথা শুনার চেয়ে বলতে বেশি পছন্দ করে
- তারা তাদের সতীর্থদের নিরুৎসাহিত করে
একজন সফল লিডারের বৈশিষ্ট্য
- তারা অন্যদের সামনে নম্রতা বজায় রাখেন
- একজন সত্যিকারের লিডার অন্যদেরকে সবসময় তাদের সর্বোচ্চটা দিতে অনুপ্রাণিত করে
- তারা গণতান্ত্রিক এবং অন্যদেরকে কাজে-কর্মে উৎসাহিত করে
- তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অন্যদের সেবায় অগ্রসর ভূমিকা পালন করেন
- অন্যদের কথা শোনেন
- তিনি তার সহকর্মীদের অনুপ্রাণিত করেন
